Title | মাসি |
Writer | অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
Publisher | খসড়া খাতা |
Country | পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
সামারিঃ
অবনের মন খারাপের কারণ ‘রবিকা’র মৃত্যুই শুধু নয়। কালক্রমে জোড়াসাঁকোর বাড়ি ভার হয়ে উঠেছে, কমে এসেছে জমিদারির আয়, বেড়েছে ঋণের পরিমাণ। অতঃপর সে বাড়ি বিক্রির কথা উঠলেও মনে মনে কেউই চাইছিলেন না। এদিকে একের পর এক আঘাতে শরীর মন ভেঙে পড়ছে। বড়দাদা গগনেন্দ্রনাথের মৃত্যু ঘটেছে কয়েক বছর আগে, স্ত্রী সুহাসিনী অসুস্থ। অবশেষে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর সাবেকি ভিটে ছেড়ে যাওয়ার সেই নির্মম কাজ যেন দ্রুততর হয়ে দেখা দিল। অবন ঠাকুরের ভাষায় ‘জোড়াসাঁকোর মনে ভাঙন’ ধরেছে তখন। তাই বুঝি এত কালের পুরোনো সে বনেদি বাড়ি আর রাখা গেল না। অবনীন্দ্রনাথের সেই অভিন্নহৃদয় ভাইদের পরিবার তিনটে পৃথক বাড়িতে আলাদা হয়ে গেল। অবনীন্দ্রনাথের জন্যে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ আগেই বাড়ি দেখে রেখেছিলেন। অবশেষে জোড়াসাঁকোর আদিপুরুষ নীলমণি ঠাকুরের কুলদেবতাকে নিয়ে সস্ত্রীক তিনি এসে উঠলেন গুপ্তনিবাসে। পূর্বজীবনের মতো পিছনে পড়ে রইল আলোকিত স্মৃতির বর্ণময় চালচিত্র।
‘মাসি’ কি কোনো ব্যক্তির আদলে গড়ে ওঠা চেনা চরিত্র? এ কথার উত্তর দিতে পারতেন একমাত্র অবনীন্দ্রনাথ স্বয়ং। শরীরকে টেনেহিঁচড়ে তুলে আনলেও শিল্পীর অনুভূতিময় মনকে ফেলে এসেছিলেন সেখানেই। সেই বেদনার গাথা হয়ে ছোট্ট অবুর মধ্যে দিয়ে জেগে রইল ‘মাসি’র আখ্যান। হয়তো তাঁর ওয়াশ-ছবির মতোই রঙের পরতে মিশে এখানে আছে কোনো মানসপ্রতিমা। কে বলবে সে কথা। নেহাত কৌতূহল ছাড়া সে জেনেও আমাদের লাভ আছে কি না জানি না। রানী চন্দের কাছে উনি নিজেই বলেছেন— “বেলঘরিয়ার বাড়িতে এসে পেলুম আর এক অপূর্ব জিনিস; প্রকৃতি মাতার আদর। তিনি তাঁর ডালপালা বুলিয়ে দিয়ে কী সান্ত্বনা দিলেন। আর এক আনন্দে ভরিয়ে দিলেন মন প্রাণ। সমস্ত দুঃখ ভুলে গেলেম, তবেই না ওই মাসির গল্পটা লিখতে পারলুম। দুঃখটা যখন কেটে যায় তখনই তা ব্যক্ত হয়। নয়তো যতক্ষণ দুঃখ থাকে, দুঃখ লোককে মুহ্যমান করে রাখে। যখন তা একটা রূপ নেয় জানবে দুঃখ কেটে গেছে।”
তবে কি অবনীন্দ্রনাথের ‘মাসি’ সেই দুঃখকে জয় করার আলেখ্য নির্মাণ? যেখানে ছড়িয়ে আছে অজস্র চেনা অনুষঙ্গ, চেনা মানুষ, চেনা নামের পাশাপাশি সহস্র অচেনার ভিড়ে? ‘মাসি’ চরিত্রের একটা আভাস বুঝি ফুটে ওঠে তাঁর কথাতেই “আসল মাতাকে জানতে পারলুম এই এতকাল পরে।... সব দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তি এই প্রকৃতি মাতার বুকে।” মাসি চলে যাওয়াও প্রকৃতির আলোছায়ার রহস্যে, “চাঁদের আলো পাতার ছাওয়া মাড়িয়ে” দিয়ে, “যেন শ্বেতপাথরের পুতুল বাগান ঘুরে ঘুরে মিলিয়ে গেল চোখের আড়ালে।” তবে কি এই প্রকৃতি মাতাই অবনের কাছে ‘মাসি’ হয়ে ধরা দিয়েছে? কে দেবে এর উত্তর!
এই অসামান্য লেখাটি এমন এক কালপর্বে রচিত— যা ‘মাসীমা’ নামে ‘বিশ্বভারতী পত্রিকা’য় প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৪৯-এর শ্রাবণ-ভাদ্র সংখ্যায়, অর্থাৎ ১৯৪২-এর জুলাই-আগস্ট নাগাদ। এরপরে ১৩৪৯ চৈত্র সংখ্যায় ‘বনলতা’ ও ১৩৫০ জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘হাতে খড়ি’ গল্প দুটি প্রকাশিত হয়। ১৩৬১-এর আশ্বিনে বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ থেকে ‘মাসি’ প্রকাশিত হয় বই আকারে।